Last Updated on 29th July 2018

দীর্ঘ নয় বছর পর বিদেশের মাটিতে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। হিসেব মতে, ২০০৯ সালে জিম্বাবুয়ে ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছিল টাইগাররা। বলতে হয়, টি-টোয়েন্টি কিংবা টেস্টে বাংলাদেশের পারফর্ম যা তা। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপ থেকেই মাশরাফির নেতৃত্বাধীন ওয়ানডে দলটি বেশ ধারাবাহিক। এ বিষয়ে বর্তমান টিমের অন্যতম সেরা তামিম ইকবাল গতকালের ওয়েস্ট ইণ্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জয় সম্পর্কে বলেন, আমার মনে হয় ২০১৫ সালের পর এই প্রথম কোন সিরিজ জিতলাম, যা আমাদের অনেক সন্তুষ্ঠি দিচ্ছে। এই সফরে আমাদের টেস্ট সিরিজটা মোটেও ভাল যায়নি। টেস্ট সিরিজটা ভাল না হওয়ার পর পুরো দলের পরিকল্পনাটা ছিল যাতে আমরা ওয়ানডে সিরিজটা ভাল ভাবে কাটাতে পারি। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচটা আমরা জিতলাম। সেই জয়ের পর পুরো দলের আত্মবিশ্বাসটা অনেক বাড়ল। দ্বিতীয় ম্যাচেও আমাদেরই জেতা উচিত ছিল। কিন্তু শেষের দিকে এসে হিসেবটা উল্টো যায়। গতকালের ম্যাচ জয়ের পর সব সতীর্থেরা পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে চলে গেছেন। সবার শেষে ড্রেসিংরুম থেকে বের হলেন দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। তামিম ইকবাল ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছেন, সিরিজসেরা হয়েছেন—সব পুরস্কার ‘খান সাহেব’ নিয়ে গেলেন, তা নিয়ে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার কী রসিকতা! পুরস্কার একটা মাশরাফিকেও দেওয়া উচিত। দ্বিতীয় ম্যাচটা হারের পর গায়ানা থেকে যখন বিমানে উঠবে বাংলাদেশ, তার কিছুক্ষণ আগে সতীর্থদের ডেকে মাশরাফি বুঝিয়েছিলেন, ‘যদি প্রথম ম্যাচটা হেরে যেতাম ১-১ থাকত না, থাকত ২-০। আমাদের এখনো সুযোগ আছে, চলো সেন্ট কিটসে সুযোগটা কাজে লাগাই।’

See also  নেইমার-এমবাপের অসাধারণ নৈপূণ্যে পিএসজির দুরন্ত জয়

অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফির এই যে অনুপ্রাণিত করার ক্ষমতা, এ জন্যই শুধু নয়, এই ম্যাচে মাশরাফিকে একটা পুরস্কার দেওয়া উচিত ম্যাচ বদলে দেওয়া এক আইডিয়ার জন্যও। তামিম যখন সেঞ্চুরি করলেন, দেখা গেল ড্রেসিংরুমের দোতলা থেকে নিচে এসে বাঁহাতি ওপেনারের অভিনন্দন জানাচ্ছেন। পায়ে তাঁর প্যাড। সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন তখনো নামেননি। মাশরাফি তৈরি হয়ে বসে আছেন, ঘটনা কী? ঘটনা আর কিছুই নয়, ছয়ে নেমে পড়লেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৪ চার, ১ ছক্কায় ২৫ বলে তাঁর ৩৬ রানের ইনিংস সহায়তা করল বাংলাদেশকে বত একটি স্কোর এনে দিতে। ছয়ে নামা প্রসঙ্গে মাশরাফি খোলাসা করলেন ম্যাচের পর,‌ ‌‘৩৫ ওভারে পর থেকে কোচ চাইছিলেন রানরেট বাড়াতে। কোচকে বললাম, আমি যাই? তখন ব্যাটসম্যানদের সোজা শট খেলা কঠিন। চিন্তা করলাম, ঝুঁকিটা আমিই নিই। কোচও আমাকে সমর্থন করলেন। বললেন, কেন দ্বিধায় ভুগছ? যাও।’ মাশরাফি গেলেন। পেটালেন। বাকিটা ইতিহাস! রাতে ডিনারের পর টিম হোটেলের সামনে আড্ডা দেওয়ার সময়ও মাশরাফি বারবার বলছিলেন, ‘আমার ওই সময়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা বড় কাজে দিয়েছে।’ যখন কথা বলছিলেন, রেস্তোরাঁর বড় পর্দায় চলছিল ম্যাচের হাইলাইটস। মাশরাফি ম্যাচ দেখছেন আর আপন মনে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করে যাচ্ছেন ম্যাচের প্রতিটা মুহূর্ত। নির্বাক আর বিস্ময়ভরা চোখে অধিনায়কের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, আর মনে হয়-আসলে মাশরাফি শুধুমাত্র এই দলটার অধিনায়কই শুধু নন, তিনি এ দলটার অভিভাবক-বড় ভাই-অনুপ্রেরণা দানকারী, সাহায্যকারী সর্বোপরী আত্মবিশ্বাসদানকারী।