বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিষয় নিয়ে পড়াশুনা
Last Updated on 10th October 2021
এইচ, এস, সি, পাশের পরপরই শুরু হয়ে যায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি যুদ্ধ। উদ্দেশ্য ভাল এবং নিজের পছন্দমত একটি বিষয় নিয়ে যাতে পড়তে পারা যায়। কিন্তু অনেকেই সঠিক তথ্যের অভাবে নিজের জন্য সঠিক বিষয় নির্বাচন করতে না পেরে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছতে পারে না। যারা বিজ্ঞানের ছাত্র তাদের সাধারণতঃ প্রথম পছন্দের তালিকায় চিকিৎসা বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিদ্যা। আবার প্রকৌশল বিদ্যা নিয়ে যারা পড়তে চায় তাদের সামনে থাকে প্রকৌশল বিদ্যার নানান ধরনের শাখা। এখন প্রশ্ন হল ভর্তিচ্ছু ছাত্র-ছাত্রীদের প্রকৌশল বিদ্যার কোন শাখায় পড়াশুনা করবে?
পড়ুন: Monash International Leadership Scholarships in Australia
প্রকৌশল বিদ্যা নিয়ে যারা পড়াশুনা করে সাফল্যের সাথে পাশ করে বের হন তাদের বলা হয় প্রকৌশলী। একজন প্রকৌশলীর কাজ হচ্ছে বিজ্ঞানীর উদ্ভাবিত মৌলিক তত্ত্বকে কাজে লাগিয়ে মানুষের দৈনন্দিন চাহিদা ও প্রয়োজন মেটানো এবং একই সাথে মানব সভ্যতার ক্রমবিকাশ ঘটানো। একজন প্রকৌশলী মূলত ‘কেন’, ‘কিভাবে’, ‘কিসের দ্বারা’ এবং ‘কত কম খরচে’- এই প্রশ্নগুলোর জবাব খোঁজার চেষ্টা করেন এবং গ্রহণযোগ্য সমাধান বের করার চেষ্টা করেন। একজন প্রকৌশলী যেহেতু সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তাই তাকে অবশ্যই দূরদৃষ্টিসম্পন্ন, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও কল্পনাশক্তিসম্পন্ন, সৃজনশীল ও দক্ষতাসম্পন্ন হতে হয়।
পড়ুন: Universiti Tunku Abdul Rahman (UTAR) Admission, Tuition fees and Scholarship
সর্বপ্রথম ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল American Institute of Electrical Engineers (বর্তমানে যা Institute of Electrical and Electronic Engineers বা IEEE নামে বেশি পরিচিত) এরপর থেকেই মূলতঃ তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল নামক প্রকৌশল বিদ্যার এই শাখাটি পরিচিতি লাভ করা শুরু করে।
বাংলাদেশে প্রকৌশল শিক্ষার গোড়াপত্তন হয় ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৭৬ সালে, ঢাকা সার্ভে স্কুল প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে। এই স্কুলকে পরে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুল করা হয় ১৯০৫ সালে। ১৯৪৭ সালে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কুলকে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে রূপান্তর করা হয়। এখান থেকে সিভিল, ইলেক্ট্রিক্যাল ও মেকানিক্যাল এই তিনটি বিষয়ের উপর চার বছর মেয়াদী বি,এস,সি, ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী প্রদান করা হত। ১৯৬২ সালে আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজকে রূপান্তর করা হয় পূর্ব পাকিস্তান প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে যার প্রতিষ্ঠাতা উপাচার্য ছিলেন বরেণ্য অধ্যাপক ড. মোঃ আব্দুর রশীদ। বলা যায় তাঁর হাত ধরেই আমাদের দেশে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রকৌশল শিক্ষার গোড়াপত্তন হয়। ১৯৭১ সালে আমাদের মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের পরে স্বাধীন বাংলাদেশে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যা বর্তমানে বুয়েট (BUET: Bangladesh University of Engineering and Technology) নামে বেশি পরিচিত। এরপর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে প্রকৌশল শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আর পিছনে তাকাতে হয়নি। এরপরের ইতিহাস আরও সামনে এগিয়ে যাবার। এছাড়া সরকার বিভিন্ন সময়ে এই পর্যন্ত অর্ধ-শতাধিক সরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছে যেগুলোর অধিকাংশই কোন না কোন প্রকৌশল বিষয়ক ডিগ্রী প্রদান করছে। ১৯৯২ সালে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন চালু হওয়ার পর এই পর্যন্ত সরকার আরও শতাধিক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন দিয়েছে যেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই কোন না কোন প্রকৌশল বিষয়ক ডিগ্রী প্রদান করছে।
পড়ুন: Japanese Government (Monbukagakusho) Scholarship
টমাস আলভা এডিসনের বিদ্যুৎ বাতি আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে মূলত ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর যাত্রা শুরু হয়। বিংশ শতকের সভ্যতার অগ্রগতির মূল চালিকা শক্তি ছিল এই বিদ্যুতের ব্যবহার। বর্তমানে জাতিসংঘের মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচক অনুসারে যদি প্রতি বছরে মাথাপিছু বিদ্যুতের গড় ব্যবহার ৪০০০ কিলোওয়াট-ঘন্টা হয় তবে সেই দেশকে উন্নত দেশ হিসেবে ধরা হয়। কাজেই একটি দেশের মানব সম্পদ সূচকের উন্নয়ন তথা সমগ্র দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, এবং সাংষ্কৃতিক উন্নয়নের জন্য চাই বিদ্যুতের গড় ব্যবহার বাড়ানো। আর এই জন্য প্রয়োজন বিদ্যুতের উৎপাদন বাড়ানো। তবে শুধু বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি করলেই হবে না, সেই বিদ্যুৎ যেন টেকসই এবং উচ্চ কর্মদক্ষতা সম্পন্ন হয় সেই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে। আর তাই একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য তড়িৎ প্রকৌশলীর ভূমিকা অপরিসীম।
তড়িৎ প্রকৌশলীর মূল কাজ হল বিদ্যুৎ শক্তির উৎপাদন, পরিচালনা ও রক্ষনাবেক্ষন, সঞ্চালন, বিতরন, সঠিক ব্যবস্থাপনা এবং এর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে সমগ্র জনগোষ্ঠির আরামদায়ক ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণ জীবন-যাপনের ব্যবস্থা করা। এছাড়া বিদ্যুৎ শক্তি ব্যবহার করে যেসব যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হয় সেসবের নির্মান, পরীক্ষণ, মান নিয়ন্ত্রণ, বিক্রয়, ব্যবস্থাপনা, কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ শক্তির টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, বাজারজাতকরন, পুনঃপ্রক্রিয়াজাতকরনের ব্যবস্থা করাও তড়িৎ প্রকৌশলীর কাজের মধ্যে পড়ে। এছাড়াও বিদ্যুৎ এবং এর ব্যবহারিক বিষয় নিয়ে গবেষণা, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন, নকশা প্রণয়ন ও এর বিন্যাস সংক্রান্ত বিষয় নিয়েও কাজ করে থাকেন তড়িৎ প্রকৌশলীরা। তবে সব ধরনের কাজই একজন প্রকৌশলী করেন না। সেজন্য তড়িৎ প্রকৌশলীর কাজের শ্রমবিভাজন করা আছে। আর সেইজন্যই একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রে বিভিন্ন ধরনের তড়িৎ প্রকৌশলীদের কাজ করতে দেখা যায়। বিভিন্ন অনলাইন জব পোর্টাল ঘাটলে দেখা যাবে বিভিন্ন ধরনের তড়িৎ প্রকৌশলীর চাহিদা।
Read: Guidelines to Creating Quiz Question for Online Class Students using Google Form
তড়িৎ প্রকৌশল বিষয় নিয়ে যারা পড়াশুনা করেন তাদের বলা হয় তড়িৎ প্রকৌশলী বা ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার। তাদের শুধুমাত্র প্রকৌশল শাখার বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশুনা করলেই চলে না, তাদেরকে পদার্থ, রসায়ন ও গণিত, ভাষা ও সাহিত্য, দেশের ইতিহাস, সমাজ বিজ্ঞান, ব্যবসা পরিচালনা ও প্রশাসন, অর্থনীতি, হিসাব বিজ্ঞান, বাজারজাতকরন, নীতিবিদ্যা, দর্শন শাস্ত্র ইত্যাদি বিষয়গুলো হতে একাধিক বিষয় নিয়েও পড়তে হয়। এছাড়াও তাদেরকে টেকনিক্যাল রিপোর্ট লেখা বা উপস্থাপনা করা, অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করা অথবা তা সংগঠিত বা সংঘটিত করা, দলের সাথে কাজ করা বা দল পরিচালনা করা, এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে যোগাযোগে পারদর্শী হতে হয়।
পড়ুন: Study in Japan, Scholarships, Visa, Cost, Programs and Universities
তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রী অর্জনের পর একজন প্রকৌশলী সাধারনতঃ যেসব সেক্টরগুলোতে গিয়ে চাকুরি পেতে পারেন তা হল, বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও বিতরণ কেন্দ্র, পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সৌর বিদ্যুৎ কেন্দ্র, আবাসিক সৌর বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ডিজাইন, ট্রান্সফর্মার, জেনারেটর, ও মোটর, ইত্যাদি ডিজাইন ও তৈরীর শিল্প, বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র, বিদ্যুৎ গ্রীড কেন্দ্র, সামরিক বাহিনী, ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, টেলিফোন এক্সচেঞ্জ, মোবাইল ফোন অপারেটর কোম্পানী, মোবাইল ফোন ভেন্ডর কোম্পানী, মোবাইল ফোন সেট ক্রয়-বিক্রয়ের কোম্পানী, স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল, স্যাটেলাইট আর্থ স্টেশন, অপটিক্যাল ফাইবার কোম্পানী, বায়োমেডিক্যাল ইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানী, বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষক ও গবেষক, সার কারখানা, রোবট নির্মান প্রতিষ্ঠান, মোটর গাড়ি তৈরী ও সংযোজনের কারখানা, টেক্সটাইল ও স্পিনিং মিল, এয়ারক্র্যাফট, ফ্লাইট ও গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার, তেল ও গ্যাস অনুসন্ধান কোম্পানী, গবেষণা ও উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান, কম্পিউটার ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও এর খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরী ও সংযোজনের গবেষনা প্রতিষ্ঠান বা এর কারখানা, ঔষধ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, এম্বিডেড সিস্টেম ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান, ব্যাংক ও বীমা প্রতিষ্ঠান, পেশাদারী পরামর্শক প্রতিষ্ঠান, আবাসন নির্মাণ প্রতিষ্ঠান, খাদ্য ও পানীয় তৈরী ও প্রক্রিয়াজাতকরন প্রতিষ্ঠান এবং এইরকম আরো অনেক ধরনের প্রতিষ্ঠানসমূহ।
তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল সর্বাধিক পরিচিত ইইই (EEE) বা ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (Electrical and Electronic Engineering) নামে। তড়িৎ প্রকৌশল বিদ্যায় চার বছর মেয়াদী স্নাতক (বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং) ডিগ্রী প্রোগ্রামে ভর্তি হতে হলে একজন ছাত্রের অবশ্যই বিজ্ঞান বিষয়ে পড়াশুনা থাকতে হবে। বিজ্ঞান বিভাগ থেকে যারা SSC ও HSC পাশ করেছে তারা এই বিভাগে ভর্তির জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে তাদের অবশ্যই বিজ্ঞানের তিনটি মৌলিক বিষয়- পদার্থ, রসায়ন ও গণিত নিয়ে HSC পাশ করতে হবে, SSC ও HSC প্রতিটিতে ২.৫ সিজিপিএ অথবা যে কোন একটিতে ২.০ এবং দুটি মিলিয়ে মোট সিজিপিএ ৬.০ থাকতে হবে। কারিগরী শিক্ষা বোর্ডের অধীনস্থ চার বছর মেয়াদী যে কোন বিষয়ে ডিপ্লোমা ডিগ্রী ধারীরাও তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিদ্যায় ব্যাচেলর ডিগ্রী প্রোগ্রামে ভর্তি হতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় অনুযায়ী ভর্তির অন্যান্য নিয়ম বিভিন্ন। যার যে বিশ্ববিদ্যালয় পছন্দ সেখানে গিয়ে ভর্তির ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্যা সংগ্রহ করতে হবে।
বাংলাদেশে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিদ্যায় চার বছর মেয়াদী বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রী প্রদান করে এরকম অনেক সাধারন ও বিশেষায়িত সরকারী ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এরমধ্যে তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিদ্যায় স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করে এরকম সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলো হচ্ছে- বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মিলিটারী ইন্সটিটিউট অব সাইন্স এন্ড টেকনোলজি প্রভৃতি। এছাড়া গাজীপুরের বোর্ড বাজারে রয়েছে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজি।
“বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে রয়েছে- নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটি, ইষ্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি, আহসানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি, গ্রিন ইউনিভার্সিটি, ইউনাইটেড ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, এশিয়া-প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি, ইন্ডেপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি প্রভৃতি”
এখানে আর একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ করতে চাই। সেটা হচ্ছে বর্তমানে অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় সরকারের অনুমোদন না নিয়েই চলছে। আবার অনেকে অনুমোদন নিলেও সরকারের সকল নিয়ম কানুন ও শর্ত ঠিকমত মেনে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছেন না; বিশেষ করে বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ মোতাবেক তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছেন না। অনেকে শিক্ষার ন্যূনতম মান বজায় রাখার কোন চেষ্টাই করছেন না। তাদের একমাত্র উদ্দেশ্য শুধুমাত্র যেনতেন উপায়ে অর্থ নেয়া। তাই সরকার বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের এই ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাপারে কড়াকড়ি আরোপ করেছেন এবং পত্র-পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কিংবা তাদের ওয়েবসাইটে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের সচেতন করে তোলার প্রয়াস নিয়েছেন। তাই শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিবাবকদের দায়িত্ব হচ্ছে কোন বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন প্রোগ্রাম ভর্তি হওয়ার পূর্বে এইসব বিষয়ে সঠিক খোঁজখবর নিয়ে তারপর ভর্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া। নিম্নে এই ধরনের কিছু বিষয়ের প্রতি আলোকপাত করা হলঃ
প্রথমতঃ শিক্ষকদের মান ও তাদের পড়ানোর দক্ষতা। অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখা যায় ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিগ্রীধারী শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় না বা সেটা পর্যাপ্ত সংখ্যক নয়। একটি ভাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত থাকা উচিৎ ২৫:১। কিন্তু অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে এই অনুপাত দেখা যায় ৫০:১ কিংবা তারও বেশি।
দ্বিতীয়তঃ পর্যাপ্ত ল্যাবরেটরির সুযোগ-সুবিধাদি। অনেক বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলেক্ট্রিক্যাল ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সব বিষয়ের ল্যাবরেটরি থাকে না। কারিকুলামে হয়ত ২৫টি ল্যাবরেটরি কোর্সের কথা বলা থাকলেও হয়ত সেখানে রয়েছে হাতে গোনা ৪-৫টি ল্যাবরেটরি। আবার সেগুলোর যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত সংখ্যক কিংবা মানসম্পন্ন নয়।
তৃতীয়তঃ উন্নত কোর্স কারিকুলাম এবং সে অনুযায়ী কোর্স আউটলাইন। এটি মানসম্পন্ন শিক্ষাদানের অন্যতম পূর্বশর্ত। অনেকের আবার উন্নত কোর্স কারিকুলাম থাকলেও সেটা ঠিকমত অনুসরন করা হয় না। সেটা তাদের নিম্নমানের ও দায়সারা গোছের বিভিন্ন পরিক্ষার প্রশ্নপত্র দেখলেই বুঝতে পারা যায়। পরীক্ষা নকলমুক্ত কি-না সেটাও একটি দেখার বিষয়।
চতুর্থতঃ উন্নত মানের লাইব্রেরী। লাইব্রেরীর সুযোগ-সুবিধাদি পর্যাপ্ত কি-না এবং সেখানে মানসম্পন্ন লেখকদের টেক্সট ও রেফারেন্স বই, গবেষণাপত্র, পত্রিকা ইত্যাদি পর্যাপ্ত সংখ্যক পাওয়া যায় কি-না তা দেখা উচিৎ।
পঞ্চমতঃ সঠিক একাডেমিক ক্যালেন্ডার। অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কোন একাডেমিক ক্যালেন্ডার থাকে না, যখন তখন ক্লাশ শুরু ও শেষ করা হয়। ক্লাশ ঠিকমত হচ্ছে কি হচ্ছে না তা দেখা হয় না। ছাত্র-ছাত্রীদের ক্লাশের ব্যাপারে কোন মতামত গ্রহণ করা হয় না।
ষষ্ঠতঃ সহ-কারিকুলাম ও কারিকুলাম বহির্ভুত কার্যক্রমে শিক্ষার্থী-শিক্ষকবৃন্দের অংশগ্রহণ আছে কি-না। এসব কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ক্লাবের মাধ্যমে স্টাডি ট্যুর, সেমিনার, ওয়ার্কশপ, ইন্ডাস্ট্রি ভিজিট, প্রতিযোগিতা, সৃজনশীল কার্যক্রম, প্রজেক্ট তৈরি ও প্রদর্শনের ব্যবস্থা, ইন্টার্নশিপ, কর্মক্ষেত্রে দক্ষতা বৃদ্ধির বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া, ইত্যাদি।
পরিশেষে যারা এইবার বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তড়িৎ ও ইলেক্ট্রনিক প্রকৌশল বিদ্যার চার বছর মেয়াদী বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং প্রোগ্রামে ভর্তি হবে তাদের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি যেন তারা ভবিষ্যতে একজন দক্ষ প্রকৌশলী হয়ে দেশ ও জাতিকে উন্নত সেবা সততা ও দক্ষতার সাথে প্রদান করতে পারে।
লেখকঃ
অধ্যাপক ড. প্রকৌশলী মুহিবুল হক ভূঞা
অধ্যাপক ও প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান (মার্চ ২০১৬ – মার্চ ২০২১)
ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ
সাউথইস্ট ইউনিভার্সিটি